¤¤ রবীন্দ্রসঙ্গীত ¤¤


আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ সুরের বাঁধনে--

তুমি জান না, আমি তোমারে পেয়েছি অজানা সাধনে॥

সে সাধনায় মিশিয়া যায় বকুলগন্ধ,

সে সাধনায় মিলিয়া যায় কবির ছন্দ--

তুমি জান না, ঢেকে রেখেছি তোমার নাম

রঙিন ছায়ার আচ্ছাদনে॥

তোমার অরূপ মূর্তিখানি

ফাল্গুনের আলোতে বসাই আনি।

বাঁশরি বাজাই ললিত-বসন্তে, সুদূর দিগন্তে

সোনার আভায় কাঁপে তব উত্তরী

গানের তানের সে উন্মাদনে॥

রাগ: বাহার-সোহিনী
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ফাল্গুন, ১৩৪৫
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): মার্চ, ১৯৩৯
স্বরলিপিকার: শৈলজারঞ্জন মজুমদার
কতবার ভেবেছিনু আপনা ভুলিয়া

তোমার চরণে দিব হৃদয় খুলিয়া

চরণে ধরিয়া তব কহিব প্রকাশি

গোপনে তোমারে, সখা, কত ভালোবাসি।

ভেবেছিনু কোথা তুমি স্বর্গের দেবতা,

কেমনে তোমারে কব প্রণয়ের কথা।

ভেবেছিনু মনে মনে দূরে দূরে থাকি

চিরজন্ম সঙ্গোপনে পূজিব একাকী--

কেহ জানিবে না মোর গভীর প্রণয়,

কেহ দেখিবে না মোর অশ্রুবারিচয়।

আপনি আজিকে যবে শুধাইছ আসি,

কেমনে প্রকাশি কব কত ভালোবাসি॥


রাগ: বিলাতি ভাঙা
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1291
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1885
মোর হৃদয়ের গোপন বিজন ঘরে

একেলা রয়েছ নীরব শয়ন-'পরে--

প্রিয়তম হে, জাগো জাগো জাগো ॥

রুদ্ধ দ্বারের বাহিরে দাঁড়ায়ে আমি

আর কতকাল এমনে কাটিবে স্বামী--

প্রিয়তম হে, জাগো জাগো জাগো ॥

রজনীর তারা উঠেছে গগন ছেয়ে,

আছে সবে মোর বাতায়ন পানে চেয়ে--

প্রিয়তম হে, জাগো জাগো জাগো।

জীবনে আমার সঙ্গীত দাও আনি,

নীরব রেখো না তোমার বীণার বাণী--

প্রিয়তম হে, জাগো জাগো জাগো ॥

মিলাব নয়ন তব নয়নের সাথে,

মিলাব এ হাত তব দক্ষিণহাতে--

প্রিয়তম হে, জাগো জাগো জাগো।

হৃদয়পাত্র সুধায় পূর্ণ হবে,

তিমির কাঁপিবে গভীর আলোর রবে--

প্রিয়তম হে, জাগো জাগো জাগো ॥


রাগ: বেহাগ
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1321
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1914
রচনাস্থান: সুরুল
স্বরলিপিকার: ইন্দি

না বুঝে কারে তুমি ভাসালে আঁখিজলে।

ওগো, কে আছে চাহিয়া শূন্য পথপানে--

কাহার জীবনে নাহি সুখ, কাহার পরান জ্বলে॥

পড় নি কাহার নয়নের ভাষা,

বোঝ নি কাহার মরমের আশা,

দেখ নি ফিরে--

কার ব্যাকুল প্রাণের সাধ এসেছ দ'লে॥

রাগ: ইমন-ভূপালী
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): অগ্রহায়ণ, ১২৯৫
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1888
রচনাস্থান: কলকাতা, দার্জিলিং
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী

কতবার ভেবেছিনু আপনা ভুলিয়া

তোমার চরণে দিব হৃদয় খুলিয়া

চরণে ধরিয়া তব কহিব প্রকাশি

গোপনে তোমারে, সখা, কত ভালোবাসি।

ভেবেছিনু কোথা তুমি স্বর্গের দেবতা,

কেমনে তোমারে কব প্রণয়ের কথা।

ভেবেছিনু মনে মনে দূরে দূরে থাকি

চিরজন্ম সঙ্গোপনে পূজিব একাকী--

কেহ জানিবে না মোর গভীর প্রণয়,

কেহ দেখিবে না মোর অশ্রুবারিচয়।

আপনি আজিকে যবে শুধাইছ আসি,

কেমনে প্রকাশি কব কত ভালোবাসি॥


রাগ: বিলাতি ভাঙা
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1291
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1885

এই করেছ ভালো, নিঠুর,

এই করেছ ভালো।

এমনি করে হৃদয়ে মোর

তীব্র দহন জ্বালো।

আমার এ ধূপ না পোড়ালে

গন্ধ কিছুই নাহি ঢালে,

আমার এ দীপ না জ্বালালে

দেয় না কিছুই আলো।

যখন থাকে অচেতনে

এ চিত্ত আমার

আঘাত সে যে পরশ তব

সেই তো পুরস্কার।

অন্ধকারে মোহে লাজে

চোখে তোমায় দেখি না যে,

বজ্রে তোলো আগুন করে

আমার যত কালো।


রাগ: ইমনকল্যাণ
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ৪ আষাঢ়, ১৩১৭
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1910
স্বরলিপিকার: সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, ভীমরাও শাস্ত্রী
আমার প্রানের পরে চলে গেল কে
বসন্তের বাতাসটুকুর মতো ।
সে যে ছুঁয়ে গেল , নুয়ে গেল রে
ফুল ফুটিয়ে গেল শত শত ।
সে চলে গেল বলে গেল না... সে কোথায় গেল ফিরে এল না।
সে যেতে যেতে চেয়ে গেল , কী যেন গেয়ে গেল
তাই আপন মনে বসে আছি কুসুমবনেতে ।।
সে ঢেউয়ের মতো ভেসে গেছে, চাঁদের আলোর দেশে গেছে,
যেখান দিয়ে হেসে গেছে, হাসি তার রেখে গেছে রে
মনে হল আঁখির কোনে আমায় যেন ডেকে গেছে সে।
আমি কোথায় যাব , কোথায় যাব , ভাবতেছি তাই একলা বসে।
সে চাঁদের চোখে বুলিয়ে গেল ঘুমের ডোর ।
কুসুমবনের উপর দিয়ে কী কথা সে বলে গেল।
ফুলের গন্ধ পাগল হয়ে সঙ্গে তারি চলে গেল।
হৃদয় আমার আকুল হল, নয়ন আমার মুদে এল রে
কোথা দিয়ে কোথায় গেল সে।

রাগ: পিলু-কালাংড়া-পরজ-কীর্তন
তাল: আড়খেমটা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1290
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1883
স্বরলিপিকার: জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর

তুমি কোন্‌ কাননের ফুল, কোন্‌ গগনের তারা।

তোমায় কোথায় দেখেছি যেন কোন্‌ স্বপনের পারা ॥

কবে তুমি গেয়েছিলে, আঁখির পানে চেয়েছিলে

ভুলে গিয়েছি।

শুধু মনের মধ্যে জেগে আছে ওই নয়নের তারা ॥

তুমি কথা কোয়ো না, তুমি চেয়ে চলে যাও।

এই চাঁদের আলোতে তুমি হেসে গ'লে যাও।

আমি ঘুমের ঘোরে চাঁদের পানে চেয়ে থাকি মধুর প্রাণে,

তোমার আঁখির মতন দুটি তারা ঢালুক কিরণধারা ॥

রাগ: মিশ্র পিলু-বারোয়াঁ
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1293
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1886
স্বরলিপিকার: জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর


তোমায় গান শোনাব তাই তো আমায় জাগিয়ে রাখ

ওগো ঘুম-ভাঙানিয়া

বুকে চমক দিয়ে তাই তো ডাক'

ওগো দুখজাগানিয়া ॥

এল আঁধার ঘিরে, পাখি এল নীড়ে,

তরী এল তীরে

শুধু আমার হিয়া বিরাম পায় নাকো

ওগো দুখজাগানিয়া ॥

আমার কাজের মাঝে মাঝে

কান্নাহাসির দোলা তুমি থামতে দিলে না যে।

আমার পরশ ক'রে প্রাণ সুধায় ভ'রে

তুমি যাও যে সরে--

বুঝি আমার ব্যথার আড়ালেতে দাঁড়িয়ে থাক

ওগো দুখজাগানিয়া ॥


রাগ: পিলু
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২৯ ফাল্গুন, ১৩২৯
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ১৩ মার্চ, ১৯২৩
রচনাস্থান: আমেদাবাদ
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
কাঁদালে তুমি মোরে ভালোবাসারই ঘায়ে--

নিবিড় বেদনাতে পুলক লাগে গায়ে॥

তোমার অভিসারে যাব অগম-পারে

চলিতে পথে পথে বাজুক ব্যথা পায়ে॥

পরানে বাজে বাঁশি, নয়নে বহে ধারা--

দুখের মাধুরীতে করিল দিশাহারা

সকলই নিবে-কেড়ে, দিবে না তবু ছেড়ে--

মন সরে না যেতে, ফেলিলে একি দায়ে॥

রাগ: দেশ-কেদারা
তাল: ঝাঁপতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1336
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1929
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
 
মেঘ বলেছে 'যাব যাব', রাত বলেছে 'যাই',

সাগর বলে 'কূল মিলেছে-- আমি তো আর নাই' ॥

দুঃখ বলে 'রইনু চুপে তাঁহার পায়ের চিহ্নরূপে',

আমি বলে 'মিলাই আমি আর কিছু না চাই' ॥

ভুবন বলে 'তোমার তরে আছে বরণমালা',

গগন বলে 'তোমার তরে লক্ষ প্রদীপ জ্বালা'।

প্রেম বলে যে 'যুগে যুগে তোমার লাগি আছি জেগে',

মরণ বলে 'আমি তোমার জীবনতরী বাই' ॥


রাগ: বেহাগ
তাল: তেওরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১৭ আশ্বিন, ১৩২১
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ৪ অক্টোবর, ১৯১৪
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী
হে মোর দেবতা, ভরিয়া এ দেহ প্রাণ

কী অমৃত তুমি চাহ করিবারে পান।

আমার নয়নে তোমার বিশ্বছবি

দেখিয়া লইতে সাধ যায় তব কবি,

আমার মুগ্ধ শ্রবণে নীরব রহি

শুনিয়া লইতে চাহ আপনার গান।

হে মোর দেবতা, ভরিয়া এ দেহ প্রাণ

কী অমৃত তুমি চাহ করিবারে পান।

আমার চিত্তে তোমার সৃষ্টিখানি

রচিয়া তুলিছে বিচিত্র এক বাণী।

তারি সাথে প্রভু মিলিয়া তোমার প্রীতি

জাগায়ে তুলিছে আমার সকল গীতি,

আপনারে তুমি দেখিছ মধুর রসে

আমার মাঝারে নিজেরে করিয়া দান।

হে মোর দেবতা, ভরিয়া এ দেহ প্রাণ

কী অমৃত তুমি চাহ করিবারে পান।


রাগ: ইমনকল্যাণ
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১৩ আষাঢ়, ১৩১৭
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1910
রচনাস্থান: বোলপুর
স্বরলিপিকার: সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, ভীমরাও শাস্ত্রী
মনে কী দ্বিধা রেখে গেলে চলে সে দিন ভরা সাঁঝে,

যেতে যেতে দুয়ার হতে কী ভেবে ফিরালে মুখখানি--

কী কথা ছিল যে মনে॥

তুমি সে কি হেসে গেলে আঁখিকোণে--

আমি বসে বসে ভাবি নিয়ে কম্পিত হৃদয়খানি,

তুমি আছ দূর ভুবনে॥

আকাশে উড়িছে বকপাঁতি,

বেদনা আমার তারি সাথি।

বারেক তোমায় শুধাবারে চাই বিদায়কালে কী বল নাই,

সে কি রয়ে গেল গো সিক্ত যূথীর গন্ধবেদনে॥


রাগ: ইমনকল্যাণ
তাল: ২ + ২ ছন্দ
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1344
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1937
স্বরলিপিকার: শৈলজারঞ্জন মজুমদার
জি মেঘ কেটে গেছে সকালবেলায়,

এসো এসো এসো তোমার হাসিমুখে--

এসো আমার অলস দিনের খেলায়॥

স্বপ্ন যত জমেছিল আশা-নিরাশায়

তরুণ প্রাণের বিফল ভালোবাসায়

দিব অকূল-পানে ভাসায়ে ভাঁটার গাঙের ভেলায়।

দুঃখসুখের বাঁধন তারি গ্রন্থি দিব খুলে,

আজি ক্ষণেক-তরে মোরা রব আপন ভুলে।

যে গান হয় নি গাওয়া যে দান হয় নি পাওয়া--

আজি পূরব-হাওয়ায় তারি পরিতাপ

উড়াব অবহেলায়॥

রাগ: আলাহিয়া বিলাবল
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1346
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1939
আজি মর্মরধ্বনি কেন জাগিল রে!

মম পল্লবে পল্লবে হিল্লোলে হিল্লোলে

থরথর কম্পন লাগিল রে ॥

কোন্‌ ভিখারি হায় রে এল আমারি এ অঙ্গনদ্বারে,

বুঝি সব মন ধন মম লাগিল রে ॥

হৃদয় বুঝি তারে জানে,

কুসুম ফোটায় তারি গানে।

আজি মম অন্তরমাঝে সেই পথিকেরই পদধ্বনি বাজে,

তাই চকিতে চকিতে ঘুম ভাঙিল রে ॥

রাগ: সাহানা
তাল: ত্রিতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): বৈশাখ, ১৩৩০
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1923
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
     
     

0 comments:

Post a Comment